Title
"রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার শিশু দোলা মনি (৪) হত্যা মামলার তিনজন আসামী গ্রেফতার ও ফৌ: কা: বি: ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড"
Details
*প্রেস রিলিজ*
তারিখ: ২৮/০২/২০২৫খ্রি:।
[Media Cell, District Police Rangpur]
"রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার শিশু দোলা মনি (৪) হত্যা মামলার তিনজন আসামী গ্রেফতার ও ফৌ: কা: বি: ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড"
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিঃ বিকাল আনুমানিক ০৩.০০ ঘটিকায় রংপুর জেলার কাউনিয়া থানার কুর্শা ইউনিয়নের মধ্য ধর্মেশ্বর মহেশা (বিজলের ঘুন্টি) গ্রামের মোঃ দেলোয়ার হোসেনের মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে শিশু দোলা মনি (৪) তার পিতার বসতবাড়ির পশ্চিম পাশের ফাঁকা জায়াগায় ফেলাধুলা করছিলো। একই তারিখ বিকাল অনুমান ০৩.৩০ ঘটিকায় দোলোয়ার হোসেনের স্ত্রী রুপা খাতুন (২৭) মেয়ে দোলা মনি'কে খেলাধুলা করার জায়গায় দেখতে না পেয়ে আশেপাশের এলাকায় খোঁজ করে সন্ধান না পেয়ে কাউনিয়া থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে। যা কাউনিয়া থানার জিডি নং-৭৮৬, তারিখ-১৭/০১/২০২৫খ্রিঃ। জিডি করার পর থেকে দেলোয়ার হোসেন তার পরিবারের লোকজনসহ শিশু দোলা মনি'র নিখোঁজের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করেন এবং আশেপাশের এলাকায় মাইকিং করেন।
দীর্ঘ ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও দোলা মনির খোঁজ না মিললে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি: দেলোয়ার হোসেন কাউনিয়া ও পীরগাছা সেনাবহিনীর ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করেন। রংপুর ৭২ ব্রিগেডের অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩০ বেঙ্গল ইউনিটের একটি টিম ও অফিসার ইনচার্জ কাউনিয়া থানার নেতৃত্বে একটি টিম যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত্রী ০৮:০০ ঘটিকায় একই গ্রামের জনৈক মোঃ আফজাল হোসেন (৫৫) এর বসতবাড়ির পিছনে (উত্তরে) থাকা সেপ্টি ট্যাংকের ভিতর থেকে নিখোঁজ শিশু দোলা মনি'র মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যায় জড়িত অভিযুক্তদের আটক করা হলে নিহতের পিতা মোঃ দোলায়ার হোসেন বাদী হয়ে আটককৃত তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এ সংক্রান্তে কাউনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করে মামলাটির তদন্তভার এসআই (নিরস্ত্র) ডন কংকন বর্মন'কে অর্পন করা হয়। তদন্তকালে অভিযুক্তদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী নূরুল ইসলাম সম্পর্কে বাদীর চাচাতো ভগ্নিপতি, যিনি বাদীর চাচাতো বোন কামরুন্নাহারকে বিয়ের করার পর থেকে ঘরজামাই হিসেবে থাকতেন। আজ থেকে প্রায় ০৬ মাস আগে উক্ত আসামী বাদীর বসতবাড়ির পিছনে জমি ক্রয় করে বসতবাড়ি নির্মান পূর্বক বসবাস করে আসছে। এর প্রায় ০১ বছর আগে আসামী নুরুল ইসলাম তার স্ত্রী কামরুন্নাহারের মেক্সি ও সেলোয়ার বানানোর জন্য বাদীর স্ত্রীর নিকট কাপড় দেয় এবং বানানো শেষে মজুরি বাবদ ১৫০/- টাকা না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটিসহ মনমালিন্য সৃষ্টি হয়। ইতোপূর্বে আসামীদের সাথে সু-সম্পর্ক থাকার কারনে বাদীর মেয়ে দোলা মনি (০৪) তাদের বাড়িতে যাতায়াত করত। পরবর্তীতে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় বাদীর স্ত্রী তার মেয়ে দোলা মনি (০৪) কে আসামীদের বাড়িতে যাওয়া থেকে বিরত রাখলে আসামী নুরুল ইসলাম বাদীর পরিবারের ক্ষতি করার মানসে সুযোগ খুঁজতে থাকে। দোলা মনি (০৪) নিখোঁজ হওয়ার পর উক্ত আসামী বাদীর বাড়িতে নিয়মিতভাবে আসা যাওয়া করে এবং আসামীর মধ্যে আচরনগত কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। বাদী উক্ত আসামীকে তার মেয়ে নিখোঁজের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলতে থাকে। এতে বাদীর সন্দেহ হলে মেয়ে দোলা মনি (০৪) নিখোঁজের বিষয়টি পীরগাছা থানাধীন অস্থায়ী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে মোঃ নুরুল ইসলাম সহ সন্দেহভাজন কয়েকজনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। সেনাসদস্যগণ ২৭/০২/২০২৫খ্রিঃ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার সময় এজাহারনামীয় ১নং আসামী মোঃ নুরুল ইসলাম এবং ৩নং আসামী মেঃ মামুন মিয়া'কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পীরগাছা থানাধীন অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামী মোঃ নুরুল ইসলাম বাদীর মেয়ে দোলা মনি (০৪) কে গত ১৭/০১/২০২৫খ্রিঃ তারিখ বিকাল অনুমান ০৪.০০ ঘটিকার সময় হত্যা করে মৃতদেহ বস্তায় ভরে প্রতিবেশী মোঃ আফজাল হোসেন (৫৫), পিতা-মৃত বায়ু শেখ এর বসতবাড়ির পিছনে (উত্তরে) সেপটিক ট্যাংকিতে ) ফেলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখেছে বলে স্বীকার করে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী সদস্যরা কাউনিয়া থানা পুলিশকে অবগত করে থানা পুলিশসহ ঘটনাস্থলে আসামী মোঃ নুরুল ইসলাম এর দেখানো মতে সাক্ষীদের সম্মুখে সাক্ষী সেফ্টি ট্যাংকের ঢাকনা খুলে ট্যাংকের ভিতর থেকে শিশু দোলা মনি'র মৃতদেহ উত্তোলন করা হয় এবং বাদী নিজে মৃতদেহের শরীরে পরিহিত কাপড় ও পায়ের স্যান্ডেল দেখে সনাক্ত করলে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত পূর্বক পোষ্টমর্টেমের জন্য যথাস্থানে প্রেরন করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ১নং আসামী মোঃ নুরুল ইসলাম (৪৫), পিতা-মৃত হানিফ উদ্দিন, সাং- হরগোবিন্দ, থানা- পীরগাছা, বতমান সাং- ধর্মেশ্বর, থানা-কাউনিয়া, জেলা- রংপুর জানান যে, ২নং ও ৩নং আসামী যথাক্রমে ২। মোঃ সোমন মিয়া (২৬), পিতা- মোঃ আব্দুস সালাম, ৩। মোঃ মামুন মিয়া (১৯), পিতা- মোঃ নুরুল ইসলাম, উভয়ের সাং- ধর্মেশ্বর, থানা-কাউনিয়া, জেলা-রংপুরদ্বয়ের সহায়তায় দোলা মনি'র মৃতদেহ সেফ্টি ট্যাংকের ভিতর গুম করে রাখে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মোট তিনজনকেই আটক করা হয়। ২৮/০২/২০২৫ খ্রি: গ্রেফতারকৃতদের বিধি মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। ১নং আসামী মোঃ নুরুল ইসলাম স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করলে বিজ্ঞ আদালত ফৌ: কা: বি: ১৬৪ ধারায় উক্ত আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন এবং তিনজন আসামীকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে অনতিবিলম্বে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হবে।
ধন্যবাদান্তে
জেলা পুলিশ, রংপুর।